প্রকাশিত: ১২/০৩/২০২২ ১২:৫৬ পিএম

সুজাউদ্দিন রুবেল ::
সৈকতে সমুদ্রস্নানে পর্যটকদের নিরাপত্তায় দুই শিফটে নিয়োজিত মাত্র ২৭ লাইফ গার্ড কর্মী, নেই পর্যাপ্ত উদ্ধার সরঞ্জাম

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে গোসল করতে নেমে বার বারই ঘটছে দূর্ঘটনা। অনেক সময় মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। শুক্রবার (১১ মার্চ) সকালে গোসল করতে নেমে মারা যান রামু কলেজের একাদশ শ্রেণির প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সাইদুল হোসেন বাপ্পী।
এ নিয়ে গেল ৫ বছরে সৈকতে গোসল করতে নেমে মৃত্যু হয়েছে ২০ জনের। আর উদ্ধার করা হয়েছে ৫’শ জনকে।
তারপরও সমুদ্রস্নানে পর্যটকের নিরাপত্তায় নেই পর্যাপ্ত লাইফ গার্ড কর্মী ও উদ্ধার সরঞ্জাম। আর প্রচার-প্রচারণা না থাকায় অনেক পর্যটক জানেন না লাল এবং লাল হলুদ পতাকার নির্দেশনা।

সাপ্তাহিক ছুটির দিন, তাই সৈকতে হাজারো পর্যটক ব্যস্ত সমুদ্রস্নানে। এরই মধ্যে সুগন্ধা পয়েন্টে গোসল করতে নেমে টিউব উল্টে ডুবে যায় দুই শিক্ষার্থী। লাইফ গার্ড কর্মীরা তাৎক্ষনিকভাবে একজনকে উদ্ধার করলেও নিখোঁজ হয় শাহেদুল ইসলাম নামে আরও একজন। পরে তাকে ঘন্টাখানেক খোঁজাখুঁজির পর উদ্ধার করে দ্রæত নেয়া হয় কক্সবাজারর সদর হাসপাতালে। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সুগন্ধা পয়েন্টে দায়িত্বরত সী সেইফ লাইফ গার্ড সংস্থার কর্মী মোহাম্মদ শুক্কুর বলেন, সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় হাজারো পর্যটক সমুদ্রে গোসল করছে সুগন্ধা পয়েন্টে। কিন্তু তাদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আছি মাত্র ৩ জন লাইফ গার্ড কর্মী। যে শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে, সেই এবং তার আরেক বন্ধু দুইজনই টিউবে চড়ে লাইফ গার্ডের নির্ধারিত সীমানার বাইরে চলে যায়। পরে ঢেউয়ের আঘাতে টিউব থেকে পড়ে যায়। এরপর আমরা দ্রæত গিয়ে একজনকে উদ্ধার করি এবং অপরজনকে ঘন্টাখানেক খোঁজাখুঁজির করার পর উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। মূলত গোসল করতে আসা মানুষজন লাইফ গার্ড কর্মীদের কোন নির্দেশনা মানে না। অনেক সতর্ক করি, কিন্তু উল্টো কেউ কেউ গালি দেয়, আবার কেউ কেউ ঝগড়া করে। বলে, আমার টাকা দিয়ে আনন্দ করতে এসেছি, বাঁধা দেয়ার তোমরা কে?
সী সেইফ লাইফ সংস্থার দেয়া তথ্য মতে, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের সমুদ্রস্নানে নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে ২৭ জন কর্মী। তারা দুই শিফটে সৈকতের ৩ টি পয়েন্টে দায়িত্ব পালন করে থাকে। এক শিফটে সকাল ৭টা থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত ১৩ জন কর্মী আর দ্বিতীয় শিফটে বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অপর ১৩ জন কর্মী। আর তাদেরকে তদারকি করার জন্য থাকে একজন সুপারভাইজার। আর ৩টি পয়েন্টেই লাল এবং লাল হলুদ পতাকা টাঙানো থাকে। লাল পতাকার অর্থ হচ্ছে এই পতাকার মধ্যে গোসল করা নিষেধ আর লাল হলুদ পতাকার অর্থ হচ্ছে এখানে গোসল করা নিরাপদ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক লাইফ গার্ড কর্মী বলেন, পর্যটন মৌসুম এবং টানা ছুটি হলে সৈকতে লাখো পর্যটকের ঢল নামে। তখন মাত্র ১৩ জন লাইফ গার্ড কর্মী দিয়ে সমুদ্রস্নানে নিরাপত্তা দেয়া কোনভাবেই সম্ভব হয় না। তারপর চেষ্টা করি, পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে।
এদিকে শিক্ষার্থী সাইদুল হোসেন বাপ্পীর মৃত্যুর পর টনক নড়েনি কারো। বরং দেখা যায়, সৈকতের সী গাল পয়েন্টে বালিয়াড়িতে লাল পতাকা টাঙিয়ে সাইনবোর্ড দিয়ে নামতে নিষেধ করা আছে। কিন্তু নির্দেশনা মানছেন না কেউ। যে যেভাবে পারছে নোনাজলে গোসল করতে নেমে পড়ছেন। আর তাদের বাধা দিতে বা নিষেধ করতে ছিল না কোন লাইফ গার্ড কর্মী, বিচ কর্মী, ট্যুরিস্ট পুলিশ। এছাড়াও সৈকতে গোসল করতে নামা অনেক পর্যটক জানেন না লাল এবং হলুদ পতাকা কি নির্দেশনা বোঝায়।
বগুড়া থেকে বেড়াতে আসা সিরাজুল ইসলাম বলেন, কক্সবাজারে এসেছি শুধুমাত্র নোনাজলে গোসল করতে। তাই এসেই গোসল করতে নেমে পড়লাম। কোন নির্দেশনা বা সতর্ক বার্তা দেখার সময় কোথায়।
সিফাত নামে আরেকজন বলেন, লাল পতাকার অর্থ হচ্ছে মহাবিপদ সংকেত আর লাল হলুদ পতাকার অর্থ হচ্ছে সৈকতে গোসল করা যাবে না।
সৈকতের ৫টি পয়েন্টে পর্যটকরা সমুদ্রস্নান করলেও লাইফ গার্ডকর্মী নিয়োজিত থাকে ৩টি পয়েন্টে। আর বাকি পয়েন্টগুলোতে পর্যটকরা সমুদ্রস্নান করলেও তাদের নিরাপত্তায় থাকে না কেউ।
সী সেইফ লাইফ গার্ড সংস্থার সিনিয়র লাইফ গার্ড কর্মী মোহাম্মদ সিরু বলেন, একে তো লাইফ গার্ড কর্মী। তার উপর নেই পর্যাপ্ত উদ্ধার সরঞ্জাম। শুধুমাত্র রয়েছে উদ্ধার বোট ও উদ্ধার টিউব। যা দিয়ে কোনভাবে পর্যটকদের উদ্ধার করা যায়। আর দূর্ঘটনা কবলিত পর্যটকদের করে হাসপাতালে নেয়ার জন্য থাকে না গাড়ি। ফলে নানা সমস্যায় পড়তে হয়। যদি লাইফ গার্ড কর্মীদের দ্রæত গতির উদ্ধার যান ও আধুনিক সরঞ্জাম দেয়া হতো, তাহলে অনেক মানুষের জীবন বাঁচানো সম্ভব হতো।

পাঠকের মতামত

গোল্ড কাপ ফাইনালে টিকিট কেলেঙ্কারি, মাঠে দর্শকদের বিক্ষোভ ও বিশৃঙ্খলা

জেলা প্রশাসক গোল্ড কাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল ম্যাচকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয়েছে চরম বিশৃঙ্খলা। শুক্রবার ...

উখিয়ায় বাল্যবিবাহ বন্ধে শিশু সুরক্ষা আইন বাস্তবায়ন বিষয়ক সভা অনুষ্ঠিত

উখিয়ায় বাল্য বিবাহের হার কমিয়ে আনতে শিশু সুরক্ষা আইন বাস্তবায়ন বিষয়ক অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ...

বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নুরুল হক চেয়ারম্যানের রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন সম্পন্ন

রামু উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নুরুল হক-এর দাফন সম্পন্ন হয়েছে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায়। ...